ঢাকাWednesday , 1 June 2022

গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ডে ৪ বার বিশ্ব রেকর্ড গড়লেন ঠাকুরগাঁওয়ের রাসেল

Zero News
June 1, 2022 8:17 pm
Link Copied!

মোঃ মামুন অর-রশীদ, ঠাকুরগাঁও  প্রতিনিধিঃ

২০১৭ সাল থেকেই স্কুল জীবনে স্কিপিং রোপ খেলা শুরু। একসময় জেলা থেকে বিভাগ পর্যায়ে স্কিপিং রোপ খেলায় অংশগ্রহণ করে প্রথম হন তিনি। বিভাগ থেকে জাতীয় পর্যায়ে স্কিপিং রোপে অংশগ্রহণ করলেও অনাবশ্যক কারণে তাকে বাতিল করা হয়। তখন থেকেই তিনি প্রতিজ্ঞা করেন একদিন এই খেলা নিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার।
এর পর থেকেই বাসার আশেপাশে বিভিন্ন সড়কের ধারে যখন যেখানে সময় পেয়েছে সেখানেই স্কিপিং রোপের চর্চা করেছেন তিনি। এক সময় নিজেকে এই খেলায় পরিপূর্ণ মনে হলে ২০১৯ সালে অনলাইনের মাধ্যমে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ডে আবেদন করেন। প্রথমে স্কিপিং রোপে এক পায়ের ওপর দুটি ইভেন্টে চ্যালেঞ্জ করেন। একটি ৩০ সেকেন্ডের অন্যটি ১ মিনিটের ওপর।
পারফরম্যান্স দেখে গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ডের কতৃপক্ষ তার আবেদন গ্রহণ করেন। গিনেস বুকে এক পায়ে ৩০ সেকেন্ড স্কিপিং রোপে ১৪৪ বার লাফানোর বিশ্ব রেকর্ড থাকলেও তিনি করেছেন ১৪৫ বার। আরেকটি অন্য ইভেন্টে ১ মিনিটে এক পায়ে ২৫৬ বার লাফানোর বিশ্ব রেকর্ড থাকলেও তিনি সেই রেকর্ড ভেঙ্গে করেছিলেন ২৫৮ বার। এই দুটি রেকর্ড গড়ে সনদপত্র (সার্টিফিকেট) হাতে পান ২০২১ সালের ২৯ জুলাইয়ে।
এরমধ্যে এক পায়ে ১ মিনিটে স্কিপিং রোপে ২৫৮ বার লাফানোর রেকর্ড ভেঙ্গে ফেলেন অন্য এক ভিনদেশী। তাতে ওই ইভেন্টে আবার চ্যালেঞ্জ করলে নতুন করে রেকর্ড গড়েন এক পায়ে ১ মিনিটে স্কিপিং রোপে ২৬২ বার লাফানোর। এছাড়াও এর আগে স্কিপিং রোপ এক জাম্পে দুইবার রশি ঘোরানো ইভেন্টে ৩ মিনিটে ৪৫৮ বার লাফিয়ে বিশ্ব রেকর্ড গড়েন ২০২১ সালের ১০ মার্চে। আর এই দুইটি রেকর্ডের সার্টিফিকেট অর্থাৎ সনদপত্র ডাক যোগের মাধ্যমে হাতে পান রোববার (২৯ মে) ২০২২ তারিখে। মোট তিনি চার বার স্কিপিং রোপ এ গিনেস বুকে বিশ্ব রেকর্ড গড়েন।
বলছিলাম বাংলাদেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার হরিহরপুর সিরাজপাড়া গ্রামের রাসেল ইসলাম নামে ২০ বছর বয়সী এক যুবকের কথা।
রাসেল উপজেলার রহিমানপুর ইউনিয়নের হরিহরপুর সিরাজপাড়া গ্রামের দরিদ্র কৃষক বজলুর রহমানের ছেলে। রাসেল ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার শিবগঞ্জ ডিগ্রি কলেজে দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়াশোনা করছেন।
রাসেল ইসলাম চার চারবার বিশ্ব রেকর্ড গড়ে বিস্ময় সৃষ্টি করেছেন স্থানীয় থেকে শুরু করে দেশবাসীর কাছে। তার এমন কৃতিত্বের খবর সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় এলাকাবাসীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষের অভিনন্দন বার্তায় সিক্ত হন রাসেল। এছাড়াও তার এমন সফলতায় আনন্দে ও খুশিতে উৎফুল্ল তার পরিবার।
রাসেলের বাবা বজলুর রহমান বলেন, ‘গরিব হওয়া সত্ত্বেও আমার ছেলেকে আমি সাধ্যমত সহযোগিতা করার চেষ্টা করেছি। তার একান্ত চেষ্টা ও পরিশ্রমের ফলে আজ সে চার বার বিশ্ব রেকর্ড করেছে। এর থেকে খুশির খবর আর কি হতে পারে! আমার ছেলের এমন সফলতায় আমি অত্যন্ত আনন্দিত ও খুশি।,
রাসেলের বড় ভাই আরিফ বলেন, প্রথমে বিশ্বাস হতো না রাসেল এত বড় কিছু অর্জন করতে পারবে। প্রথমবার যখন সে বিশ্ব রেকর্ড গড়ার দুইটি সার্টিফিকেট পায় তারপর থেকে তার প্রতি আমার ধারণা চেঞ্জ হয়ে গেছে। সে পৃষ্ঠপোষকতা পেলে আশা করছি সে আরো ভালো ও বড় পর্যায়ে যেতে পারবে।
তার প্রতিবেশি ও বন্ধুরা জানান, ছোট বেলা থেকেই খেলার প্রতি খুব আসক্ত সে। তার স্বপ্ন ছিল একদিন বড় কিছু করবে।
তেমনি একজন প্রতিবেশি ও শিক্ষক মোঃ আলমগীর বর্তমানে প্রধান শিক্ষক, মথুরাপুর পাবলিক হাই স্কুল, তিনি বলেন তার মত প্রতিভাবান ও পরিশ্রমী ছেলে আমি দ্বিতীয়টি দেখিনি। আমি প্রায় তার প্রেকটিস বিকালে পল্লী বিদ্যুৎ মাঠে দেখতাম এবং সব সময় তাকে সামনে এগিয়ে যাওয়ার পরামর্শ দিতাম, আজ তার সেই সাফল্যের জন্য আমি ব্যক্তিগতভাবে ভীষণ খুশি’। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে সে আরো অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারবে।,
রাসেল ইসলাম বলেন, ‘সকলের সহযোগিতায় প্রথম বাংলাদেশি হিসেবে রোপ স্কিপিং খেলায় এবার দিয়ে ৪ বার গিনেস বুক অফ ওয়ার্ল্ডে রেকর্ড গড়ি। এজন্য ধন্যবাদ জানাই বাংলাদেশ আনসার ভিডিপি স্পোর্টস অফিসার এডি রায়হান স্যার, বাংলাদেশের রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আসিফ হাসান, জেলা প্রশাসকসহ ঠাকুরগাঁওবাসীকে। যারা আমাকে সবসময় সহযোগিতা ও উৎসাহিত করেছেন। সকালে পাশে থাকলে ও সহযোগিতা করলে আরো অনেক দূরে এগিয়ে যেতে পারবেন ও শুধু চারটি নই এ ধরনের আরো অনেক বিশ্ব রেকর্ড করে বাংলাদেশকে উপহার দিতে পারবেন বলে জানান তিনি।,
রাসেলকে সাধুবাদ জানান সদর উপজেলার নির্বাহী অফিসার আবু তাহের মো: সামসুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘রাসেলের এই খেলার বিষয়ে কোন রকম সহযোগিতা লাগলে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তা করা হবে।,
রাসেলে স্কিপিং রোপ খেলায় এবার দিয়ে চারটি বিশ্ব রেকর্ড করার বিষয়টি নিশ্চিত করে বাংলাদেশ রোলার স্কেটিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক আহমেদ আসিফুল হাসান আসিফ জানান, ‘রাসেলের পৃষ্ঠপোষকতার জন্য ফেডারোশনের সভাপতির সাথে আলোচনা করা হয়েছে। সে যেন এই খেলাটি চালিয়ে যেতে পারে। এছাড়াও রাসেলের কৃতিত্বের বিষয়ে ক্রীড়া মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রীর সাথে আলোচনা করা হবে।