খাওয়ার কিছু নেই, আশ্রয়ও নেই। দুই দশকের মধ্যে আফগানিস্তানের সবচেয়ে মারাত্মক ভূমিকম্প থেকে বেঁচে যাওয়া ব্যক্তিরা এবার কলেরা প্রাদুর্ভাবের আশঙ্কা করছেন।
পাকতিকা প্রদেশ দুর্যোগে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এরই মধ্যে জাতিসংঘ জানিয়েছে অঞ্চলটিতে কলেরা প্রাদুর্ভাবের মারাত্মক ঝুঁকি রয়েছে। এ বিষয়ে তারা স্থানীয়দের সতর্ক করছে
ধ্বংসস্তূপের মধ্যে এক রকম খালি হাতেই খোঁজাখুঁজি চলছে। ভুক্তভোগী আগা জান তার পরিবারের বাড়ির ধ্বংসস্তুপে নিজেদের ব্যবহৃত জিনিস দেখে নিজেকে সংবরণ করতে পারেন না। তার চোখ পানিতে ভেসে ওঠে।
‘এগুলো ছিল আমার ছেলেদের জুতা’, বলে জুতো থেকে ধুলো ঝেড়ে ফেলার বৃথা চেষ্টা করে।
আগা জান ঘুমন্ত অবস্থায় ভূমিকম্পে তার তিন শিশু সন্তান ও দুই স্ত্রী হারিয়েছেন।
বুধবার ভোররাতে কম্পন অনুভূত হওয়ার সাথে সাথে আগা জান তার পরিবার যেখানে থাকত সেই ঘরে ছুটে যান।
‘সবকিছু ধ্বংসস্তূপের নিচে ছিল এমনকি আমার বেলচাও। আমি কিছুই করতে পারছিলাম না। আমি সাহায্য করার জন্য আমার কাজিনদের ডেকেছিলাম কিন্তু যখন আমরা আমার পরিবারকে বের করে আনলাম, তারা ইতিমধ্যেই মারা গেছে।’
পাকতিকা প্রদেশের বারমাল জেলার আগা জানের গ্রামের আশেপাশের এলাকাটি ভূমিকম্পে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। যেখানে প্রায় ১ হাজার লোক মারা গেছে এবং আরও ৩ হাজার আহত হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
এর নিকটতম বড় শহরে যেতে তিন ঘণ্টা ড্রাইভ করতে হয়। বেশিরভাগ রাস্তায় অবস্থাই বাজে। দুর্গম অবস্থানের কারণে আহতদের পরিবহন করা আরও কঠিন হয়ে উঠেছে। কয়েকজনকে তালেবানের সামরিক হেলিকপ্টারে করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
গ্রামের প্রায় প্রতিটি বাড়িই সাধারণত কাদা ও পাথর দিয়ে তৈরি। ফলে বাড়িগুলো বিশ্রিভাবে ক্ষতিগ্রস্ত বলে মনে হচ্ছে। অঞ্চলটির প্রায় প্রতিটি পরিবারই কমপক্ষে একজন আত্মীয়কে হারিয়েছেন, বইছেন স্বজন হারানোর শোক।
হাবিব গুল সীমান্তের ওপারে পাকিস্তানি শহর করাচিতে শ্রমিক হিসেবে কাজে ছিলেন। যখন তিনি খবরটি শুনলেন, বারমালে তার গ্রামে ফিরে এলেন। ভূমিকম্পে তিনি তার ২০ জন আত্মীয়কে হারিয়েছেন ততোক্ষণে। তাদের মধ্যে একটি বাড়িতেই ছিল তার ১৮ জন আত্মীয়!
‘আমি কার নাম বলবো? আমার অনেক আত্মীয়-স্বজন শহীদ হয়েছে, তিন বোন, আমার ভাগ্নি, আমার মেয়ে, ছোট বাচ্চারা।’
গ্রামবাসী চায় বিশ্ব ধ্বংসযজ্ঞ দেখুক, তারা চায় তাদের নামে সাহায্য আসুক।
হাবিব গুল বিবিসিকে বলেন, বিশ্ব যদি আমাদেরকে ভাইয়ের মতো দেখে এবং আমাদের সাহায্য করে, আমরা এখানেই আমাদের মাটিতে থাকব। যদি তারা না আসে, আমরা এই জায়গা ছেড়ে চলে যাব, যেখানে আমরা আমাদের চোখের পানি নিয়ে এত দিন কাটিয়েছি।
এলাকাটিতে সামরিক হেলিকপ্টার আকাশে ঘুরতে দেখা যায়। গ্রামবাসী জানায়, তারা আহতদের আর পরিবহন করছে না বরং তাদের রেখে যাচ্ছেন। তালেবান কর্মকর্তারা আমাদের বলেছেন উদ্ধার অভিযান শেষ হয়েছে।
ঘরহারা শতাধিক পরিবারের জন্য সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন আশ্রয়।
আফগান এবং আন্তর্জাতিক সাহায্য সংস্থাগুলো ক্ষতির বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করছে এবং প্রয়োজনীয় সাহায্য সরবরাহ করছে বলে জানানো হয়।
জাতিসংঘও ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তায় এগিয়ে এসেছে।