ঢাকাSunday , 3 July 2022

সোস্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস দিয়েই কাউন্সিলর পুত্রবধূর মৃত্যু

Zero News
July 3, 2022 10:55 am
Link Copied!

এম, দলিলুর রহমান, চট্টগ্রাম-লোহাগাড়া প্রতিনিধিঃ

কথার আঘাত ছুরির চেয়েও ধারাল’ নিজের ফেসবুক আইডিতে এমন স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন রেহনুমা ফেরদৌস। মৃত্যুর মাত্র ১৮ ঘণ্টা আগে এমন স্ট্যাটাস দেন তিনি। আবার রেহনুমা নিজেদের পারিবারিক ফেসবুক গ্রুপেও লিখেছেন, ‘সবার জন্য কষ্ট হচ্ছে। সবাইকে খুব মিস করছি।’ আর কষ্টের এই লেখালেখির পরই এল তার মৃত্যুর খবর। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের ১২ নম্বর (সরাইপাড়া) ওয়ার্ডের কাউন্সিলর নুরুল আমিনের পুত্রবধূ রেহনুমা।

০২ তারিখ শনিবার সকাল ১০টার দিকে শ্বশুরবাড়ি থেকে তার লাশ উদ্ধার করা হয়। রেহনুমার এই মৃত্যু নিয়ে রহস্যের সৃষ্টি হয়েছে। কাউন্সিলর নুরুল আমিনের পরিবারের দাবি, রেহনুমা আত্মহত্যা করেছেন। রেহনুমার বাবার দাবি, মেয়েকে নির্যাতনে হত্যা করা হয়েছে।

ঘটনাস্থলে গিয়ে ফ্লোরে শোয়া অবস্থায় রেহনুমার লাশ উদ্ধার করেছে পুলিশ। তার গলায় দাগ রয়েছে। রেহনুমা চসিকের আলকরণ ওয়ার্ডের প্রয়াত কাউন্সিলর ও নগর আওয়ামী লীগের সাবেক নেতা তারেক সোলেমান সেলিমের ভাই তারেক ইমতিয়াজের মেয়ে। রেহনুমার ২ বছরের একটি মেয়ে রয়েছে। রেহনুমাকে পারিবারিক নানা অজুহাতে বিয়ের কিছুদিন পর থেকে শ্বশুরবাড়ির লোকজন নির্যাতন করে আসছিল বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

সকালে কাউন্সিলর নুরুল আমিনের পরিবারের পক্ষ থেকে রেহনুমা গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে পুলিশকে খবর দেন। পাহাড়তলী থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে রেহমুনার লাশ উদ্ধার করে। লাশ ঝুলন্ত অবস্থায় ছিল না। ফ্লোরে শোয়ানো অবস্থায় তার লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল মর্গে পাঠানো হয়। ২০১৭ সালের ২২ ডিসেম্বর পারিবারিকভাবে রেহনুমার বিয়ে হয়েছিল কাউন্সিলর নুরুল আমিনের ছেলে ব্যাংকার নওশাদুল আমিনের সঙ্গে।

পরিবারের উদ্ধৃতি দিয়ে পুলিশ জানায়, বিয়ের পর থেকে যৌতুক দাবিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে রেহনুমাকে মানসিক নির্যাতন করে আসছিল শ্বশুরবাড়ির লোকজন। এ নিয়ে দুই পরিবারের মধ্যেও টানাপোড়েন চলতে থাকে। রেহুনুমা ও নওশাদের মধ্যেও দাম্পত্য কলহ চলতে থাকে। এরই মধ্যে তাদের কোলজুড়ে আসে একটি মেয়ে। দিন দিন সমস্যা প্রকট হতে থাকে। রেহনুমা ও নওশাদ দুজনই আওয়ামী পরিবারের। এ কারণে পারিবারিক ও দাম্পত্য কলহের বিষয়টি নগর আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ও সাবেক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীনকে জানানো হয়। তিনিই দুই পরিবারকে ডেকে বিষয়টি মীমাংসা করে দেন। তারপরও তাদের পারিবারিক কলহ থেমে থাকেনি।

রেহনুমার পরিবারের একজন সদস্য জানান, বাপের বাড়ি থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় শ্বশুরবাড়িতে গেলে শ্বশুরবাড়ির লোকজন বলত, ফকিন্নির মেয়ে তাদের একটি গাড়িও নেই, আমাদের কটা গাড়ি আছে দেখ এইভাবে হেনস্তা করত প্রায় সময়। রেহনুমার বাবা তারেক ইমতিয়াজ বলেন, আমার পরিবারে একটি ফেসবুক গ্রুপ রয়েছে। সে গ্রুপে লিখেছে, সবার জন্য কষ্ট হচ্ছে। সে সবাইকে মিস করছে। এরপর আমার মেয়ের মৃত্যুর খবর আসে। তিনি আরো বলেন তার লাশ পুলিশ ঝুলন্ত অবস্থায় পায়নি। লাশের গলায় দাগ ছিল, হাতের মুঠোতে কিছু চুলও ছিল। মনে হচ্ছে আমার মেয়েকে নির্যাতন করেই হত্যা করেছে। এ ব্যাপারে থানায় মামলার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছি।

নগর গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (পাহাড়তলী জোন) মহিউদ্দিন সেলিম বলেন, কাউন্সিলর বাড়ি থেকে তার পুত্রবধূর লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। একপক্ষ বলছে হত্যা, অপরপক্ষ বলছে, আত্মহত্যা। লাশ ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদন পাওয়ার পর মৃত্যুর আসল কারণ জানা যাবে।