ঢাকাFriday , 20 September 2024

চিনি মেশানো পানি খেয়েই ঘুমিয়ে পড়ে কিউবার মানুষ

Zero News
September 20, 2024 12:37 am
Link Copied!

বেশ কিছু বাণিজ্যিক নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে লড়ছে কিউবা সরকার। যুক্তরাষ্ট্রের দেওয়া এসব নিষেধাজ্ঞার কারণে নিত্যপণ্য আমদানিতে হিমশিম খাচ্ছে দেশটি।সরকারি তথ্য অনুযায়ী, দ্বীপরাষ্ট্রটিতে প্রতি মাসে রুটি উৎপাদনের জন্য ৩ হাজার ৩০০ টন গমের প্রয়োজন। কিন্তু গত জুলাই ও আগস্টে দেশটি এ চাহিদার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ জোগাড় করতে পেরেছে। চলতি মাসের জন্য জোগাড় হয়েছে মাত্র ৬০০ টন।

সরকারি এক সিদ্ধান্তে ইতিমধ্যে রেশনে দেওয়া রুটির আকার ছোট করা হয়েছে। একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের হাতের তালুর চেয়েও ছোট একেকটি রুটি। চাল দুষ্প্রাপ্য। আর তেল ও কফি পাওয়া যাচ্ছে না কোথাও।অভাবে কেউ কেউ শুধু পানিতে চিনি মিশিয়ে খেয়ে ঘুমাতে যান।

৫৭ বছর বয়সী রোসালিয়া টেরেরো হাভানায় একটি দোকানে কাজ করেন।তিনি বলেন, ‘কেউ কেউ শুধু পানিতে চিনি মিশিয়ে খেয়ে ঘুমাতে যান।রোসালিয়ার পরিবারেরই সাত সদস্য প্রতিদিন এক টুকরা করে ভর্তুকির রুটি খেয়ে বেঁচে থাকছেন। কিউবা সরকার রেশনের রুটির ওজন ৮০ গ্রাম থেকে কমিয়ে ৬০ গ্রাম নির্ধারণ করেছে। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পেট ভরার জন্য ওইটুকু রুটি যথেষ্ট নয়।’

ভর্তুকি দেওয়া রেশনের খাবার না থাকলে বেশির ভাগ কিউবানকে না খেয়ে থাকতে হতো। এসব খাবারও এখন অনেক দুষ্প্রাপ্য ও ব্যয়বহুল হয়ে পড়েছে।

কমিউনিস্ট–শাসিত কিউবায় মাত্র তিন বছর আগে বেসরকারি দোকান চালুর অনুমোদন দেওয়া হয়। এখন এসব দোকান থেকে বেশির ভাগ মানুষ খাবার কেনার সামর্থ্য রাখেন না। আবার কিছু সরকারি দোকান আছে, যেখানে ভর্তুকির খাবার পাওয়া যায় না। এসব দোকানে শুধু বৈদেশিক মুদ্রা গ্রহণ করা হয়। এ কারণে ওই সব দোকান থেকেও খাবার কিনতে পারেন না কিউবার মানুষ।

গত ৩০ বছরের মধ্যে সবচেয়ে বাজে অর্থনৈতিক সংকটের সঙ্গে লড়াই করছে কিউবা। দেশটিতে বর্তমান মূল্যস্ফীতির হার আকাশচুম্বী। একজন মানুষের গড় মাসিক আয় মাত্র ৪২ ডলার (৫ হাজার ৪০ টাকা)।

তবে কিউবানদের সবচেয়ে বড় ধাক্কাটি দিয়েছে খাদ্যসংকট।

কিউবায় বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে অব্যাহতভাবে। এর ফলে দেশটির প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ জনসংখ্যার পুষ্টি চাহিদা পূরণ করা দুঃসাধ্য হয়ে পড়েছে।

গত সপ্তাহে পোতাশ্রয়ে গমভর্তি একটি জাহাজ নোঙর করা ছিল। জাহাজটি থেকে গম খালাস করা যাচ্ছিল না। কিউবা সরকার বলেছে, তাদের কাছে জাহাজটি থেকে গম খালাসের পর্যাপ্ত অর্থ নেই। সম্প্রতি একটি চাল ও লবণভর্তি জাহাজের ক্ষেত্রেও এ সমস্যা দেখা দিয়েছিল।

লিনোরকা মন্টেনিগ্রো (৫৫) একজন গৃহিণী, হাভানার একটি রেশনের দোকানে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাস ফেলছিলেন। চার সন্তানের মা ও পাঁচজনের দাদি লিনোরকা। তিনি বলেন, ‘আমার রেফ্রিজারেটর একেবারেই খালি, সেখানে কিছুই নেই, এমনকি বাতাসও না।’

লিনোরকা পাঁচ পাউন্ড চাল ও দুই পাউন্ড চিনি সংগ্রহ করতে সক্ষম হয়েছেন। তবে অভিযোগ করেন, এটিই তার পুরো মাসের ভর্তুকি মূল্যে পাওয়া রেশনপণ্য।

এদিকে কিউবা সরকার এ পরিস্থিতির জন্য যুক্তরাষ্ট্রকে দায়ী করছে। ১৯৬২ সালে যুক্তরাষ্ট্র কিউবার ওপর নিষেধাজ্ঞা দেয়। ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর এ নিষেধাজ্ঞা আরও কঠোর করা হয়।কিউবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্রুনো রদ্রিগেজ গত সপ্তাহে বলেছেন, ওই নিষেধাজ্ঞার কারণে কিউবাকে বছরে ৫০০ কোটি ডলারের বেশি মূল্য দিতে হচ্ছে। এর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই ব্যয় হচ্ছে ভর্তুকি দিয়ে খাদ্য বিতরণ করতে গিয়ে।

১৯৯০ সালের পর এবারই সবচেয়ে বেশি অর্থনৈতিক সংকটে আছে কিউবা। খাদ্যসংকটের পাশাপাশি এখন ওষুধ, জ্বালানি ও বিদ্যুৎ বিপর্যয়ের কারণেও নানামুখী সংগ্রাম করতে হচ্ছে দেশটির নাগরিকদের।